সেবা ও সুফী ভাইয়াপী

English translation

ফিতীয়ান শব্দটার পয়দা ফাতা বা জোয়ান হাল থিকা৷ "মহানুভবতা, সততা, আনুগত্য ও সাহস গুণগুলার চমৎকার নজিরের পকাশ" এই মানেতে শব্দটার ব্যাভার হয়৷ ঋকিয়া ই কর্নেল লিখছেন (আমাগো তরজমা), "ফুতুয়া হইল এক ধরনের সুফী বীরত্ব যা স্বার্থত্যাজন ও ভাইয়াপীর পর জোর দেয়৷" উনার লিখা আর্লি সুফী উমেন [১] নামক বইয়ে উল্লেখিত ফাতিমা আল খানাকাহিয়ার দেওয়া একটা সুন্দর সংজ্ঞা হইল, "নিবিশেষে পরের সেবা কইরা যাওয়ার নাম ফুতুয়া৷"

ইবনে বতুতা আনাতোলিয়ার ফিতীয়ান সংগঠনগুলার বিশেষ তারিফ করছেন৷ অপরাপর মুসলিমদেশগুলার ফিতীয়ান সংগঠনগুলার বিবরণ ইবনে বতুতা ততটা করেন নাই৷ সম্ভবত ওইসময়ের তুর্কীদেশের গতিশীলতা ও সমাজসচেতনতায় আম্রা ওসমানিয়া খেলাফতের আগাম আভাস দেখতে পাই৷ ইবনে বতুতার বয়ানে মুসাফির আগন্তুকের অশেষ সেবা এই সংগঠনগুলার এক পধান বিশেষত্ব হিসাবে দেখা যায়৷

আনাতোলিয়ায় ইবনে বতুতার আহনে দেওয়া উদার ভোজগুলা, ওই সাথে যে আনন্দ পরবের পকাশ ওরা করছিল, গান, নাচ, ওগোর নেটওয়ার্ক এক শহর থেকে আরেক শহরে উনার সফর যেইভাবে সহজ কইরা দিছিল, আর ওগোর বিচিত্র পোষাক আরব মুসাফিরকে স্পষ্টতই মুগ্ধ করছিল৷ ফলে ইবনে বতুতার লিখায় আম্রা ওগোর কাজ ও আতিথেয়তার কথা বেশি শুনি৷ ওগোর বেশিরভাগই আছিল সাধারণ লোক৷ এক শহরে ওগো নেতা আছিল এক মুচি৷ নানা কারবারের ব্যবসায়ী পেরায় দুইশ লোক ওর নেতৃত্বের তাঁবে আছিল৷ নেতাকে ওরা কইত আখি মানে ভাই৷ দিনে ওরা যা রোজগার করত তার সবি খরচ করত রাইতে৷

বাংলাদেশে পাগলপন্থী ফকির কারাম শাহকে শিষ্যরা ভাইসাহেব নামে ডাকত৷ হাজার হাজার গরিব মুসাফিরের খাবার জোগান দিতে থাপিত হযরত জালালুদ্দিন তাবরেজীর (রঃ) লঙ্গরখানার কথা উনার চরিতে পাওয়া যায়৷ আগে উত্তর বাংলার লোক হযরত জালালুদ্দিন তাবরেজীকেও শাহ জালাল কইত৷ মনে হয় উনারা একই লোক আছিলেন৷ ইবনে বতুতা সিলেটের শেইখের আখড়ায় তিন দিন আছিলেন৷ ওই সময় হযরত শিষ্যগো কইছিলেন আরব মেহমানের বিশেষ সেবা করতে৷

বাঙ্গালার তাসাউফের আর্থসামাজিক দর্শন আরেক রকম আছিল৷ বাঙ্গালার সুফীরা সকলকে নিয়া চলতেন, সকলকে ব্যস্ত রাখতেন৷ পরে চিশতিয়া সুফী আলাউল হক বাঙ্গালীর চেষ্টায় উত্তর বাঙ্গালায় হিন্দের সুফীভাব চালু হয়৷ আলাউল হকের শেইখ আছিলেন সিরাজুদ্দিন ওসমান হজরত আখি সিরাজ (ম:১৩৫৭সাল?)৷

আখি নামটাও যেমনে দেখায় তেমনে এক গপ্প দেখায় আখি সিরাজের শিখনপদ্ধতি ও মন৷ আলাউল হক শিষ্য বটার পর ঘোড়ায় চড়া পীরের পিছনে হাড়ি মাথায় নিয়া ঘুরতেন৷ হিন্দের তরিকা চিশতিয়ার অনুসারী হইলেও আখি সিরাজের মা আছিলেন লাখনৌতির বাসিন্দা৷ আলাউল হক আছিলেন লাহোর থনে পরিষাণকরা ওমরাহ পরিবারের একজন৷ কওয়া হয় অতিমাত্রায় টাকা খরচ করার জন্য সুলতান সিকান্দার শাহ শেইখ আলাউল হককে রাজধানী থনে সোনারগাঁয় নিবাসন দেন৷ বাঙ্গালায় সাধারণত ধার্মিক সুলতান ও সাচ্চা সুফীগো মাঝে আড়াআড়ি আছিল না৷

"দি এডভেনচারস অব ইবনে বতুতা" [২] নামক বইয়ের লেখক রস ডুনের মতে, রাজনৈতিক আন্দোলনের সময়ে ফিতীয়ান পৌর সংসক্তি টিকাইয়া রাখার, ও প্রতিরক্ষার সাহায্যে জরুরি নাগরিক কাজগুলা করার লোকের অভাব পুরণ করছিল৷ এই অর্থে আখিগো সাফফারী বিপ্লবের সিস্তানি আয়ারগো সাথে তুলনা করা যায়৷ আয়ার ধর্মগত ভাইদলের লোক আছিল কিন্তু তার কাজ আছিল ধর্মনিরপেক্ষ ও সাধারণভাবে জনহিতকর৷ আয়ারান ফুতুয়ার অর্থে ব্যাভার হইলেও ফারসীতে আয়ারান ডাকাতদলও বুঝায়৷ এর কারণ সম্ভবত আছিল ইরানী ও শকগো পুরাতন ঝগড়া৷ পুরান সিস্তানি ভাব সম্ভবত ভারতের পশ্চিম উপকূলের দিকে টিকা রইছে৷ ফারসীতে ফুতুয়া হইল জোয়ানমর্দি৷

সুফীবাদের বাইরের খোলসের ইতিহাসের দুইটা থাক দেখা যায়৷

      ১৷ আল্লাহর রসুলের ( দঃ) আসহাবে-সুফ্ফা দল৷

      ২৷ বসরার আদি জাহেদগণ এবং উনাগো সাথে সংশ্লিষ্ট পুব ইরানে (সিস্তান, খুরাসান, আফগানিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের অংশবিশেষ) ব্যস্ত আছিলেন একদল মুজাহিদ, যাগো কতেক আছিলেন আল্লাহর নবীর (সাঃ) সাহাবা বা সঙ্গী, তবে বেশিরভাগই তাবেউন (সাহাবাগো অনুগ) কিংবা তাবে-তাবেউন৷

আসহাবে-সুফ্ফা দলের কাজকামের বিস্তারিত ইতিহাস নাই৷ তবে রসুলের (দঃ) সাহাবা হজরত আবু দরদার (রাঃ) নাম নানা কারণেই নজরে পরে৷ উনার বিবি আছিলেন বসরার পয়লা মাইয়া জাহেদ৷ সাদ লিখছেন উনি আবু দরদার এক বোলের উদ্ধৃতি দিছেন, এক ঘন্টার চিন্তা এক রাইতের দাড়াইয়া ইবাদতের চাইতে ভাল৷ পয়লাকালের সুফীগো সাথে আহলে সুফ্ফার সংশ্লিষ্টতার একটা নজির আম্রা এইখানে দেখি৷ আবু দরদার আরো সংযোগ দেখা যায়৷

আছমা আছিলেন সুরিয়ার এক মহিলা সুফী৷ উনি নিসওয়ানের তাবেদার আছিলেন৷ নিসওয়ান ফিতীয়ান শব্দটার মাইয়া বুঝাইতে সিরজান রূপ৷ ধর্মের কাজে সফরে উনার পবল উৎসাহের জন্য আছমা সুফীগো মাঝে সুবিদিত ছিলেন৷ উনি আবু দরদার নাতী কিংবা নাতিন-বৌ আছিলেন৷

গপ্প এই হজরত আবু দরদা পিতিমপূজা বাদ দিয়া মুসলিম হন বহু দেড়িতে৷ বস্তুত কওয়া হয় উনি মদীনায় উনার পাড়ার ইসলাম নেওয়া শেষ লোক আছিলেন৷ উনার মুসলিম বন্ধু হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাহ বদরের লড়াই থনে ফিরা আইলে উনি পুছ করতে যান বন্ধু কেমনে আছেন৷ ইবনে রাওয়াহাহ তখন বাসায় আছিলেন না৷ ফিরতি যাওয়ায় ইবনে রাওয়াহাহ আবু দরদাকেও বাসায় পান নাই৷ হঠাৎ কইরা এই সময় ইবনে রাওয়াহাহ উনার পূজার ঘরে ঢুইকা পুতুলগুলা সব ভাইঙ্গা চইলা যান৷

বাসায় ফিরা ব্যাপার শুইনা মর্মাহত আবু দরদা পয়লা বন্ধুর পর খুবি রাইগা যান৷ কয়েকদিন পর শোধ নেওয়ার খায়েস গেলে ও মন নরম হইলে উনি ইবনে রাওয়াহাহর কাছে গিয়া ইসলাম নেওয়ার ইচ্ছা পকাশ করেন৷ ইবনে রাওয়াহাহ উনাকে তখন রসুলাল্লাহর (দঃ) কাছে নিয়া যান৷

হজরত আবু দরদা তেজারতি করতেন৷ পরে উনি তেজারতি ছাইড়া দেন ও রসুলের আহলে সুফ্ফা দলে যোগ দেন৷ আবু দরদা কইতেন ইবাদৎ ও তেজারতি এক সাথে করা যায় না৷ আল্লাহর রসুল (দঃ) তেজারতি পেশায় উৎসাহ দিছেন৷ হজরত সালমান ফারসী (রা:) কেমনে আবু দরদাকে কষ্টের পথ নরম করার উপদেশ দিছেন সেই সুবাদে একটা গপ্প আছে৷ হজরত মুহাম্মদ (দঃ) ভিনদেশী সালমান ও আবু দরদার মাঝে ভাইয়ের সুবাদ গড়েন৷ বিবিকে ভাল কাপড় কিনা না দেওয়া, রাইতে কম ঘুমাইয়া ইবাদতে কাটান আবু দরদার নানা বিষয়ই সালমানের মনমত হয় নাই৷ পড়ে আবু দরদা আল্লাহর রসুলকে সালমানের কথা কইলে রসুল (দঃ) সালমানের কথাই সঠিক কইছেন৷

সালমান ফারসীর নাম সুফী সিলসিলায় পাওয়া যায়৷ মদীনায় আহনের ও ইসলাম মানার আগে উনি মাদইয়ানে কিছুকাল নাসারা সাধুগো সাথে আছিলেন৷ এই মাদইয়ান ইরাকের সিস্টোফোন না পরে উনি যেইখানের আমীর বহাল হন৷ গপ্প আছে এক সওদাগর মজুর ভাইবা উনাকে কিছু মাল বহন করতে কয়৷ যদিও তখন উনি থানের শাসক আছিলেন উনি বিনা আপত্তিতে ভারটা বহন করেন৷

আবু দরদা কোরান শিখাইতেন৷ লিখা পুরা কোরানশরীফ যে কয়েকজন সাহাবীর কাছে আছিল আবু দরদা উনাগো একজন আছিলেন৷ পরে উনাকে সুরিয়ার দামেস্কে বিচারক করা হয়৷ হইতে পারে তখন উনি দামেস্কের মসজিদে আহলে সুফ্ফার মত দল তৈরি করেন৷

ইবাদৎ বন্দেগি ছাড়া আহলে সুফ্ফা দলের কোন কাম আছিল না৷ লোকে রসুলের (সাঃ) মসজিদে যে খাবার পাঠাইত তাতেই উনাগো চলত৷ কেউ বা সাময়িকভাবে আহলে সুফ্ফা দলে আছিলেন৷ বহু গরিব আছিলেন৷ উনারা ফকিরের নজির আছিলেন৷ এক হাদিস কয় জ্ঞান ফুকারার মাঝে৷ এই ফিকর ভিক্ষা মাগনের ফকিরের নাই৷ তবে আগে মনে হয় ফকির নামটা ভিখারী বা মিছকিন মানেতে ব্যাভার হয় নাই৷ কারণ অমুসলিম মিছকিনকে ফকির কওয়া হয় নাই৷ আবার অনেকে মিছকিন কইতে অমুসলিম ভিখারীকে বুঝায়৷ মুছুল্লী এমনকি কোন মুসলিমকেও মিছকিন কওয়া ভুল৷

আবু দরদা মারা যান ৬৫২ সালে দামেস্কে কিংবা আল-সিকান্দারিয়ায়৷ এর পরে মাবিয়ার (খলিফা ৬৬১-৬৮০সাল) তাড়ে পুবের মত পশ্চিমে সুফীবাদের তেমন ব্যাপ্তি কিছুকাল দেখা যায় নাই৷ মাবিয়ার রাজধানী আছিল দামেস্ক৷ মাবিয়া সুরিয়ার আমীর হয় ৫৩৯ সালে৷ এর আগে সুরিয়ার আমীর আছিলেন ফিলিস্তীন জয়ী বীর৷ উনি আছিলেন মাবিয়ার বাবা আবু সুফিয়ানের লহুর পোলা৷ মাবিয়া ও আবু সুফিয়ান তাই উনার সাথে সুরিয়ায় আছিলেন৷ এই সময় বাইজেন্টাইন ও খৃষ্টানগো সাথে সুরিয়ার মুসলিমগো লাগাতার লড়াই আছিল৷ এক লড়াইয়ে আবু সুফিয়ান কানা হইয়া যায়৷ সতাত ভাইয়ের সহকারী হিসাবে চালাক ও কাজে তৎপর মাবিয়া হজরত ওমরের (রা:) আস্থা পাইছিলেন৷ তাই ভাইয়ের মরণে হজরত ওমর মাবিয়াকেই আমীর করেন৷ হজরত ওমর মারা যান ৬৪৪ সালে৷ আন্দাজ ৬৪৭ সাল থিকা সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার হদ্দ ও লড়াইয়ে দখল গনিমতের ভাগ নিয়া সুরিয়ায় সাধারণ মুসলিমগো মাঝে অসন্তোষ দানা বান্তে থাকে৷

সাহাবা হজরত আবু সাইব উসমান ইবনে মাজউনের জীবনীতে দুইটা ব্যাপার দেখা যায় যা ইসলামে সাধু-সন্ত সাজা কঠিন করছে৷ এক আল্লাহর রসুল (দঃ) উনাকে সংসার বিরাগী হওয়ার অনুমতি দেন নাই৷ যখন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) মরা উসমানের মুখে চুমা খান, হজরত আয়েশা দেখেন নবীর অশ্রু উসমানের গালের পর দিয়া বইতেছিল৷ জানাজায় এক বুড়ি কইয়া উঠছিল "খুশী হও আবু সাইব বেহেস্ত তোমারি৷" ও কিভাবে তা জানে হজরত (সাঃ) পুছ করলেন, কইলেন এইটুকু কওয়াই যথেষ্ট আছিল যে আবু সাইব আল্লাহ ও আল্লাহর রসুলকে ভালবাসতেন৷

আবার ভাল মুসলিমরা বিশ্বাস করতেন ইয়েমেনের উয়াইস আল-কারানী (ম:৬৫৭সাল?) সুবাদে রসুল (সাঃ) কইছেন উনি শেষ বিচারের দিন মুমিনগো পক্ষে শাফায়াত করার সুযোগ পাইবেন৷

সাহাবা মুঘিরার হিলাল নামে এক দাস আছিল৷ সুফীরা কয় এই হিলালকে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) কালের সাত আবদালের চাইতেও বড় কইছেন৷ হিলালের বাস্তবতা উনার মরার পর পকাশ করা হয়৷ হজরত মুসা ও হজরত খিজিরের গপ্প খোদার লুকান এই ধরনের বিশেষ বান্দাগোর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয়৷

রসুলুল্লাহর (সাঃ) আহলে সুফ্ফা সাহাবীগো সুফ্ফাকেই পয়লা সুফীর আখড়া ভাবা যায়৷ এই সাহাবীগো সুবাদে আম্রা খুবি কম জানি৷ মুস্তাফা রসুলুল্লাহর এক নাম৷ মুস্তাফা মানে করা যায় সুফীদের সরদার৷ রসুলুল্লাহ (সাঃ) ইয়াথরিবের নাম বদলাইয়া মদীনা রাখেন৷ বাইবেলে মাদইয়ানের হজরত শুয়াইবের এক নাম যেথরো৷ এইখানে একটা বিরাট ব্যাপার অনুমান করা যায়৷ আম্রা তা "প্রাক-ইসলামী ইসলাম ও তার সুফী" [৩] নামের লিখায় বয়ান করছি৷

খানকাহ নামটা চালু হওয়ার আগে সুফীর আখড়াকে আরবীতে কওয়া হইত ছাওমা (কোরানশরীফ ২২:৪০)৷ ফিলিস্তীনের রামলায় একটা ছাওমা আছিল৷ কিছু লেখক এইটাকেই পয়লা সুফীর আখড়া ভাবছে৷ এর প্রতিষ্ঠাতা আছিলেন আবু হাসিম আস-সুফী৷ সময়টা ৫০ হিজরির (৬৭০সাল) মত৷ আনুষ্ঠানিকভাবে সুফীর আখড়া পয়লা গাড়েন হযরত আবদুল ওয়াহিদ হাম্মাদ ইবনে জাইয়াদ (মঃ৭৯৩/৭৯৪সাল)৷ খানকাহ নামটা তখনো আছিল না৷ খানকাহ নামটা ফারসী, এই নামটা চালুর কারণ হন পূব ইরানে আবদুল ওয়াহিদের ভবিষ্যৎ শিষ্যগো একজন৷

আবদুল ওয়াহিদ আছিলেন হযরত হাসান বসরি ও রাবিয়া বসরির (মঃ৮০১/৮০২সাল) সঙ্গী৷ তবে হাসান বসরির চাইতে আবদুল ওয়াহিদের বয়স মেলা কম আছিল মনে হয়৷ হযরত রাবিয়াকে (রঃ) বিয়া করার আশা পকাশ কইরা আবদুল ওয়াহিদ রাবিয়ার বকা খাইছিলেন৷ উনারা আছিলেন তাবেউন মানে (সাহাবীগো) অনুগ ও শিষ্য৷ সাহাবী মানে আল্লাহর রসুলের সাথী৷ পরের মুসলিমরা যারাই আল্লাহর রসুলকে (সাঃ) উনার মরণের আগে ঈমানের চোখে দেখছেন উনাগো সকলকেই সাহাবী কইছেন৷

হাসান বসরি যখন শেষবার সাহাবী তেসরা খলিফা হযরত ওসমানের (রাঃ) খুতবা শুনছিলেন তখন তাঁর বয়স আছিল পনের৷ এর কিছু পরে হযরত আলী (রাঃ) কুফা যান৷ দুই বছর পর হাসানও ইরাক যান৷ তবে উনি ইরাকের বসরা শহরে যান৷

মাবিয়া ও উমাইয়া আমলের রাজনৈতিক দমননীতির লাই হযরত আলীর (রাঃ) সাথে হাসানের সুবাদের আভাস সুফী-সাহিত্যের বাইরে নাই৷ যদিও তরুন বয়সে অন্যান্যগো সাথে তিনিও যুদ্ধে যোগ দেন, বস্তুত উনি সিস্তান বিজয় ও পথম কাবুল অভিযানে অংশ নেন, মনে হয় উনি ঝামেলাকে খুব ভয় পাইতেন৷ ধার্মিক, তুখোড় ও জোয়ান মুসলিমগো একটা বিরাট ভাগ ওই সময় ইরানে নানা জায়গায় অমুসলিম বিদ্রোহ দমনে বহাল আছিলেন৷

হযরত আলী (রাঃ) আছিলেন মদীনার সেরা সাত ওস্তাদগো একজন৷ আর অল্প বয়স সত্যেও হাসানও পুব ইরানে সরকারি লেখক ও সিস্তানের পধান মসজিদ, জাহেদান মসজিদে, ইসলাম শিখানের দায়িত্বে আছিলেন৷ বাকপটুতা ও ভাষার পর অধিকার থাকায় উনি সিস্তানের আমীর সাহাবী হযরত আবদুররহমান ইবনে সামুরার (রাঃ) সাথে সিস্তান যান৷ তাই মনে হয় মদীনায় হাসান হযরত আলীর (রাঃ) শিষ্য আছিলেন সুফীরা যেমনে কয়৷

মদীনার যে আধ্যাত্মিক পরিবেশে হাসানের ছোটবেলা ও শিখনবেলা কাটছে ওই পরিবেশ হযরত আলীর (রাঃ) ও আহলে সুফফা সাহাবীগো মারেফত ও হাকিকত জ্ঞানে তৈরি হইছিল৷ হযরত হাসান বসরির আম্মা আছিলেন বিশ্বাসীগো মা হযরত উম্মে সালমার (রাঃ) কাজের মেয়েলোক৷ ছোটবেলায় মা কাছে না থাকলে হযরত উম্মে সালমাই (রাঃ) হাসানের পর নজর রাখতেন৷ হযরত উম্মে সালমা (রাঃ ) পয়লা দিকের মুসলিমাগো একজন৷

আল্লাহ্ র রসুল (দঃ) ইবনে সামুরার পুতুলপূজারি নাম বদলাইয়া আবদুররহমান রাখেন৷ ৫১ হিজরিতে (৬৭১সাল) সাহাবী রাবি বিন জিয়াদ আল-হারিথি যিনি সিস্তানে আল্লাহ্ র ধর্ম কায়েম করেন পুরা খুরাসানের আমীর হন৷ হযরত হাসান বসরি তখন রাবির লেখক হন৷ রাবির আগে বিশাল খুরাসানের আমীর আছিলেন হযরত আল-হাকাম ইবনে আমর আল-গিফফারি (রা:, ম:৫০ হিজরি)৷ সুবিদিত সংযমী এই সাহাবী ভুলে আমীর পদ পান৷ অক্ষু অববাহিকায় (ট্রানসোকসিয়ানা ও সোঘদিয়া বা সাঘানিয়ান) উনিই ছিলেন খলীফার বহাল পয়লা আমীর৷ রাবি বিন জিয়াদ আল-হারিথি যার সাথে এই তরুন লোকগুলি পুব ইরানে সময় কাটান, উনিও খুব আধ্যাত্মিক আছিলেন৷ উনি কুফা ও বসরা থিকা পরিবারসহ পঞ্চাইশ হাজার লোককে খুরাসানে বসত করান৷ ভবিষ্যতের বহু খুরাসানী সুফীর পুর্বপুরুষ ইনাগো মাঝে আছিলেন৷ এই রাবি দুই বছর কয়েক মাস (আন্দাজ ৬৭১-৬৭৩সাল) খুরাসানের শাসক আছিলেন৷ তখন মাবিয়ার রাজত্ব৷

যখন খবর আসল মাবিয়ার আদেশে হুয্ র বিন আদির মাথা কাটা হইছে আরবগো আচরণে, ওরা যে খলীফার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ায় নাই, রাবি বিন জিয়াদ জীবনের পর পবল বিতিষ্ঠা বোধ করেন৷ মসজিদে ইমামতির সময় কাফনের চাদর গায়ে যদি আল্লাহ উনার পর তুষ্ট তাইলে তখনই দুনিয়া ত্যজনের প্রার্থনা করেন সুচতুরভাবে সকলরে বাধ্য করেন আমিন কইতে৷ ফিরার পথে উনি পইরা যান এবং ওই দিনই মারা যান৷

হুযর বিন আদি আল-কিন্দি কুফার একজন সুবিদিত ও সম্মানিত ধার্মিক লোক আছিলেন কিন্দাহ ও বানু হিন্দের মাঝে কিছু অনুসারিসহ৷ উনি কুফায় উমাইয়া কাজকামের একজন খোলাখুলি সমালোচক আছিলেন৷ সাত বছর এক নাগারে উনি কুফার উমাইয়া শাসকের বিরুদ্ধে খুৎবায় হজরত আলীকে অভিশাপ করায় এবং অপরাপর কুকামের লাই চেচাইয়া প্রতিবাদ করতেন৷

একজন নুতন শাসক উনাকে আর সহ্য করে নাই এবং মাবিয়ার কাছে উনার বিরুদ্ধে নালিশ করে৷ এমনকি বিশ্বাসীগো মা হজরত আয়েশা (রা:) মাবিয়াকে পুছ করছেন কেন ও হুযরকে হত্যা করছে৷ পরে মাবিয়া কাজটাকে ভুল স্বীকার করছিল৷ শিয়ারা হুযরকে ভুলে নাই৷ কিন্তু সুন্নীরা প্রায় ভুইলা গেছে যদিও জ্ঞান অর্জনে চীনদেশেও যাও এই হাদিসটা মনে রাখার তালিকায় উনার নাম আছে৷ মনে হয় ওইকালে ইরাকের কিন্দাহরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে আগুয়ান আছিল৷

হাসান আল-বসরির (ম:৭২৮সাল) অগ্রজ আরো কয়েক তাবেউন সুফীর নাম পাওয়া যায়৷ উনারা কয়েকজন হইলেন আমীর ইবনে আব্দুল কায়েস (ম:৬৮০ সালের আগে), আকলামা ইবনে কায়েস আল-নাখাই (ম:আ:৬৮২সাল), সিলা ইবনে উশাইম (ম:৬৯৫সাল/৯৬হিঃ) ও উনার বৌ মুয়াধা বিনতে আব্দুল্লাহ, আল-আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ আল-নাখাই (ম:আ:৭০০সাল), আল-আলা ইবনে জিয়াদ (ম:৭১২সাল)৷ হাসান আল-বসরির অনুসারীগো মাঝে আছিলেন থাবিত আল-বুনানি (ম:৭৪৪/৭৪৫সাল) ও হাবিব আল-আজমী৷

আবদুল ওয়াহিদ উনার খানকাহ গড়ছিলেন দখিনপশ্চিম ইরানের আবাদান শহরে৷ এটা আদিতে আছিল বয়সে বড় বন্ধু রাবি বিন সাবি (সুব) আল ফকিহর (মঃ৬৭৯সাল) সেনানিবাস ও দূর্গ৷ ইনি আছিলেন আরেক রাবি৷ ইতিহাসবিদগো লিখায় রাবি আছিলেন বানুসাদের মুক্তলোক৷ রাবি উনার সঙ্গী মুজাহিদগো কিছু সংখ্যক অতিরিক্ত (নফল) নামাজ ও রোজা, এবং সবসময় আল্লাহকে মনে করার (জিকির) তাগিদ দিতেন৷ উনি চান্দা তুইলা সেনানিবাসটা গড়ছিলেন৷ হাসান বসরি লিখছেন যে রাবি এক নৌ-অভিযানে হিন্দে যান৷ হিন্দের এক দিয়ায় উনার কবর হয়৷

লোকে কয় হযরত আবদুল ওয়াহিদ হযরত আবু হানিফার মরণে (৭৬৭সাল) আল্লাহকে শুকরিয়া জানাইছিলেন কারণ আবদুল ওয়াহিদের বিবেচনায় ইমামী সুন্নাহ থিকা "তুলনার মাধ্যমে আইন অনুমান করছেন৷" এ ধরনের কথাবার্তার আসল মানে না বুইঝা কম জ্ঞান কিঁবা ঈমানের লোক সুফীবাদকে তথাকথিত শরিয়তী ইসলামের পরিপন্থী ভাবে৷ এর ফলে বহু আলোচনায় সুফীবাদ বা তাসাউফের বৈষয়িক ও সামাজিক দিকগুলাও উপেক্ষিত হয়৷

হজরত আবু হানিফাকে তেজারতির বদলে ইসলামী আইনের পরাশুনায় উৎসাহ করেন সাবি নামে এক সুফী৷ পরে আবু হানিফা ইমাম হজরত জাফর সাদিকের ছাত্র হন৷ ইমাম জাফর সাদিকের দাদা ইমাম জয়নাল আবেদিন এবং ইমাম জয়নাল আবেদিনের বাবা হজরত ইমাম হুসেইন (রা:)৷

হজরত জাফর সাদিকের পড়াশুনায় উনার নানা ইমাম কাশেম ইবনে মুহাম্মদের অনেক পভাব অনুমান করা যায়৷ ইমাম কাশেমের বাবা মুহাম্মদ (৬৩১-৬৫৮সাল) হইলেন হজরত আবু বকরের ছোট পোলা৷ মাবিয়ার আদেশে উনাকে নির্মভাবে হত্যা করা হয়৷ হজরত আবু বকরের সাথে বিয়ে হওয়ার আগে মুহাম্মদের মা হজরত আছমা (রা:) আছিলেন হজরত আলীর বড়ভাই হজরত জাফরের (রা:) বিধবা বিবি৷ তাই মুহাম্মদের জনমের পেরায় তিন বছর পর উনার বাবা হজরত আবু বকর মারা গেলে হজরত জাফর ও আছমার অপরাপর পোলাগো সাথে মুহাম্মদকে হজরত আলী পালছেন৷

ইমাম কাশেমের বিবি আছিলেন হজরত আবু বকরের আরেক পোলার মাইয়া৷ ইমাম কাশেম ও এই বিবির মাইয়া ফাতিমা উম্মে ফারওয়াহ আছিলেন ইমাম জাফর সাদিকের মা৷

ইমাম কাশেম আছিলেন উনার সময়ের মদীনার সব চাইতে বড় ইমাম৷ কওয়া যায়, যদিও নক্সবন্দিয়ারা এই ধরনের কথা নাও পছন্দ করতে পারে, নক্সবন্দিয়া তরিকা উনার মাধ্যমে মূলে হজরত আবু বকর ও হজরত আলী দুয়োর থিকাই আইছে৷ নক্সবন্দিয়া তরিকার সিলসিলা দেখায় আবু বকর > সাহাবী সালমান ফারসী > ইমাম কাশেম৷ নক্সবন্দিয়া তরিকার আদি শেইখরা তাইফুরিয়া তরিকায় আছিলেন৷ তাইফুরিয়া হজরত বায়াজিদ বিস্তামীর (ম:আঃ৮৭৫সাল) অনুসারীগো তরিকা আছিল৷ তাইফুর বায়াজিদ বিস্তামীর নাম৷

কালে তাইফুরিয়া সুফীরা মাজুব (উদাস) হওয়ায় কিংবা খুব সাধারণ লোকগো পির হওয়ায় তরিকার ইতিহাস হারাইয়া গেছে৷ পরে তুর্কী খাওজাগানগো চেষ্টায় তাইফুরিয়া তরিকার এক শাখা আলোতে আইলেও ইমাম জাফর সাদিক (৭০২-৭৬৫সাল) থিকা বায়াজিদ বিস্তামীর শেইখ জাফরের মাঝের ইমামগো ভুইলা যাওয়া হইছে৷ ইরানে শিয়াগো উঠতিতে এই ইতিহাস আরো গেছে৷ কারণ জাফর ছাড়া আর সকলেই আছিলেন বারো ইমামী শিয়াগো ইমাম৷

জাফরের গপ্প দুইটা ব্যাপারে পাওয়া যায়৷ এক, বায়াজিদ তাইফুর মেলা বছর নিজ শেইখের কাছে থাকলেও কোনদিন মাথা টান কইরা তাকের পরে রাখা জাফরের বইগুলা লখেন নাই৷ এই গপ্পে শিষ্যের নিজ মুর্শিদের লাই আদব এবং জাহেরী বইয়ের জ্ঞানের দাম নাই দেখান হইছে৷ এককালের সুফীভাব আছিল শিনায় শিনায় শিখান৷

দুই, বার ইমামী শিয়াগো এগারই ইমাম হজরত হাসান ইবনে আসকারী (৮৪৫-৮৭৪সাল?) মারা গেলে জাফর উনার ভাই হিসাবে সাক্ষ্য দিছিলেন যে এগারো ইমাম কোন পোলা রাইখা যান নাই৷ এর ফলে কিছু লোক জাফরের বিরুদ্ধে বাজে কথা কইছে৷

আবদুল ওয়াহিদের অনুজ সঙ্গী আবু সুলাইমান আল-দারানি (ম:৮৩০সালের আগে) সুফীবাদের তাত্তিক রূপ রীতিবান্ধা করার চেষ্টা করেন৷ উনি পরে সুরিয়ায় যান৷ উনি সুরিয়ার পধান সুফীগো একজন আছিলেন৷ উমাইয়া শাসনে পুব পশ্চিমের যে লাগাতারভাব ছিড়া গেছিল তা জোরা লাগানের পিছনে উনার শ্রম অনুমান করা যায়৷

আবাদানে আবদুল ওয়াহিদের অপরাপর ছাত্র ও অনুজের মাঝে আছিলেন উনার ভাইয়ের পোলা বকর ইবনে উখত৷ উনার অনুসারীরা বকরিয়া নাম পাইছে৷ সম্ভবত বকরিয়াকেই সুফী তরিকার পয়লা নাম ভাবা যায়৷ নয় শতকের শেষভাগের সুবিদিত কয়েকজন সুফী যেমনে বিশর আল-হাফি, সারি আল-সাকাতি, ও সহল আল-তুসতারি আবাদানের ছাত্র আছিলেন৷

৮০০ সালের আগেই যে সুফীগো ভাষার বোধ ও ব্যাভার তুখোড় হয় তা বুঝা যায় নিজকালের সবচাইতে সেরা মুসলিম হিসাবে পরিচিত শেইখ আবদুল্লাহ ইবনে মুবারকের এক বোল থিকা৷ উনি কইছেন, একমাত্র বিচ্ছিন্নটাই মিলনের লাই পাগল হয়৷ এক যুদ্ধ থিকা ফিরার পথে উনি মারা যান (৭৯৭সাল)৷

ইবনে কাররাম (মঃ৮৭০সাল) ও তার অনুসারীরা ৮০০ থিকে ১০০০ সাল পর্যন্ত পূর্ব ইরানে খানকাহ জনপ্রিয় করছেন৷ মাজহাবগুলার ভয়াবহ অন্তর্বিগ্রহের ফলে আম্রা উনাগো ইতিহাস হারাইছি৷ বস্তুত দশ শতকের শুরু থিকা যে সুফী হত্যা লখা যায়, তা কাররামিয়া দমনের লাগাতার ঘটনা৷

এই হত্যাগুলার পিছনে আছিল ধূর্ত সংখ্যালঘু চাকুরে ও পচা শাসকগো আঁতাত৷ যেমনে হাল্লাজকে (ম:৯২২সাল) মারার পিছনে আছিল শিয়া উজির কারণ হাল্লাজ পচার করছেন বারই ইমাম নাই৷ যদিও নালিশ আছিল উনি কারমাতি দলের সহায় মক্কায় হজে যাওয়া বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছেন৷ সহল আল-তুসতারির মাদ্রাসার তালেব হইলেও জোয়ান বয়সে হাল্লাজ এক সময় ইসমাইলী শিয়া দলের মিশনারি হইছিলেন৷ এখন শিয়াদলের ক্ষয়ে নিজের শিষ্য বাড়ানোর চেষ্টা করায় উনি হিংসার শিকার হন৷

হাল্লাজ যখন ইসমাইলী শিয়া দলে আছিলেন তখন মুল মুসলিম সমাজের থিকা ওই দলের তারতমের কারণ আছিল রাজনৈতিক৷ ওরা খলিফাকে মাইনা নেয় নাই৷ ওইকালে ইসমাইলী নেতা হামদান কারমাত পয়লা ইনসাফ ও সাম্যের ভিতে একটা সাচা মুসলিম শাসন কায়েমের চেষ্টায় আছিলেন৷ পরে কারমাতি দলের পয়দা হয়৷ কাররামিয়া সুফীগো পধান শত্রু আছিল ইসমাইলীরা৷

ইবনে কাররাম বলখে কিছুকাল থিতু হইছিলেন৷ আফগানিস্তানের মেলা তাঁতি উনার চেষ্টায় মুসলিম হয়৷ হইতে পারে খানকাহর ভাব উনি পাইছেন বৌদ্ধ সংঘ ও বিহারগুলা লইখা৷

বলখের পধান বৌদ্ধবিহারের প্রমুখ মুসলিম হন৷ এর ফলে বলখের হায়থাল (সাদা হুন) রাজা উনাকে কিছু আত্মীয়সহ মাইরা ফেলে ৭০৪ সালের দিকে৷ এই প্রমুখ বারমাকীগো পুবপুরুষ আছিলেন৷ বলখের আরেকজন পধান নও-মুসলিম আছিলেন সামান খুদা৷ উনি মুসলিম হউন ৭২৫ সালের দিকে৷ উনি সামানী সুলতানগো পুবপুরুষ আছিলেন৷ উনারা যেমনতেমন মুসলিম আছিলেন না৷ ৭৪৯ সালের আব্বাসী বিপ্লব খুরাসানে সার্থক হওয়ার পিছনে উনাগো বংশধরগো দান আছিল৷ তেমনি পুরাকালের পাকিস্তানসহ বিশাল খুরাসানে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ইসলাম পসারের পিছনেও আছিল উনাগো দান যেইটা পশ্চিমে খলীফা হারুন আর-রশীদের লাই বারমাকীরা করতে পারেন নাই৷ আব্বাসী আমলের আগে ইরানের পুবে খেলাফতের সকল তল্লাট বেশিরভাগ সময় বিশাল খুরাসানের শাসনে আছিল৷

টেকিয়া বা টেকে শব্দটার মাঝে খানকাহর সেবার দিকটা দেখা যায়৷ শব্দটার অর্থ গরিবদের আশ্রয়৷ কবি সানাই (মঃ১১৩১সাল) কাজি মনসুরের গড়া খানকাহর তারিফ করছেন৷ ওইখানে ধর্ম, আত্মা ও কায়ার দরকারে তালিমের ব্যবস্থা আছিল এবং বই ও ঔষুধ পাওয়া যাইত৷

মাওলানা রুমির তরিকার অনুসারী পুরান মৌলভিয়াগো এই রকম একটা নিয়ম আছিল যে নুতন সাগরেদকে পয়লা রান্নাঘরে কাজ করতে হইত৷ মাওলানা ভাসানী উনার চেষ্টায় সংগঠিত ঢাউস সম্মেলনে যেইভাবে খাবারের ব্যবস্থা করতেন তা দেইখা লোকে তাজ্জব হইছে৷ মনে হয় এই ব্যাপারে উনার সুফী ট্রেনিং কাজে আইছে৷ সততা, সাহস, দলগত প্রচেষ্টা - যার আগেপিছে অপরের সেবার ধারণা জড়িত - একাগ্রচিত্তে লক্ষে পৌঁছানোর চেষ্টা করা, ওই চেষ্টায় বল দেওয়ার জন্য আল্লাহর কছে আকুল আবেদনের স্বভাব, এবং ওইসাথে পথের বাধাবিপত্তিগুলি সুবাদে প্রাকচিন্তা, পরিকল্পনা না থাকলে জগতে দাগ ফেলা যায় না৷ পুরাকালে এই গুণগুলা সুফীরাই মুসলিমদের শিখাইছিল৷

নিদেশ

১৷ Rkia E. Cornell: "Early Sufi Women," Fons Vitae, 1999.

২৷ Ross E. Dunn: "The Adventures of Ibn Battuta," Univ. of California Press, 1989.

৩৷ প্রাক-ইসলামী ইসলাম ও তার সুফী